۵ آذر ۱۴۰۳ |۲۳ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 25, 2024
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন

হাওজা / মহানবী (সা.) এর বংশধারার সর্বশেষ ইমাম হচ্ছেন ইমাম মুহাম্মদ আল মাহদী (আ.), যিনি শেষ যামানায় আবির্ভূত হয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী হুকুমত এবং ন্যায়বিচার কায়েম করবেন এবং পৃথিবীর বুক থেকে অন্যায়-অত্যাচার ও শোষণের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে আপামর মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত্য পোষণ করে যে, মহানবী (সা.) এর বংশধারার সর্বশেষ ইমাম হচ্ছেন ইমাম মুহাম্মদ আল মাহদী (আ.), যিনি শেষ যামানায় আবির্ভূত হয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী হুকুমত এবং ন্যায়বিচার কায়েম করবেন এবং পৃথিবীর বুক থেকে অন্যায়-অত্যাচার ও শোষণের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তার আগমন অবশ্যম্ভাবী এবং এতে কোন সন্দেহ নেই। তার আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য শিয়া-সুন্নী হাদীস গ্রন্থসমূহে মহানবী (সা.) থেকে এতদপ্রসঙ্গে বর্নিত হয়েছে :

لو لم يبق من الدنیا إلا یوم لبعث الله رجلا مناّ یملأ¬ها عدلا کما ملئت جورا

“দুনিয়া ধ্বংস হতে মাত্র একদিনও যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে মহান আল্লাহ (ঐ একদিনের মধ্যেই) আমাদের (আহলে বাইতের) মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রেরণ করবেন যে এ পৃথিবী যেভাবে অন্যায়-অবিচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক সেভাবে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে তা পূর্ণ করে দেবে।” (মুসনাদ-ই আহমদ ইবনে হাম্বল, ১ম খণ্ড, পৃ.৯৯, বৈরুত, দারুল ফিকর কর্তৃক প্রকাশিত)

মহানবী (সা.) হুযাইফা বিন ইয়ামানকে বলেন :

یا حذیفة لو لم يبق من الدنيا الا يوم لطول الله ذلک اليوم حتي يملک رجل من اهل بيتي، تجري الملاحم علي يديه و يظهر الاسلام لا يخلف وعده و هو سریع الحساب

“হে হুযাইফা! এ পৃথিবী ধ্বংস হতে মাত্র একদিনও যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে মহান আল্লাহ ঐ দিনকে এত বেশী দীর্ঘ করবেন যাতে আমার আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত এক ব্যক্তি (বিশ্বের) শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হয় যার হাতে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং ইসলাম ধর্ম বিজয়ী হবে । মহান আল্লাহ স্বীয় ওয়াদা ভঙ্গ করেন না এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।” (ইকদুদ দুরার, আবু নাঈম ইস্ফাহানী প্রণীত সিফাতুল মাহদী)

মহানবী (সা.) বলেছেন :

لا تذهب الدّنیا حتی یملک العرب رجل من اهل بیتی یواطئ اسمه اسمی

“আমার আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত এক ব্যক্তি-যার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ, সে যে পর্যন্ত সমগ্র আরবের অধিপতি না হবে, সে পর্যন্ত এ দুনিয়া ধ্বংস হবে না।” (সুনান আত তিরমিযী, বৈরুত, দার ইহয়াইত তুরাস আল আরাবী, কিতাবুল ফিতান, ৫২তম বা মাহদী সংক্রান্ত অধ্যায়, পৃ ৬১১, হাদীস নং ২২৩০)

উপরিউক্ত এ সব সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, শেষ যামানায় কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন একটি অকাট্য বিষয় যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।

আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদগণ ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত অগণিত হাদীস ও রেওয়ায়েত অনেক সাহাবী ও তাবেয়ীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যা তাদের বড় বড় প্রামাণ্য ও প্রসিদ্ধ হাদীস ও ইতিহাসের গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

গবেষক পণ্ডিত ও আলেমদের মতে, আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসগণ মহানবী (সা.) এর তেত্রিশ জন সাহাবী থেকে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত হাদীস নিজ নিজ হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন; একশ’ ছয় জন প্রসিদ্ধ সুন্নী আলেম গায়েব ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত হাদীস নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বত্রিশ জন প্রসিদ্ধ সুন্নী আলেম ইমাম মাহদী (আ.) প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন।

ইমাম মাহদী (আ.), তার গুণাবলী এবং তার আবির্ভাবের নিদর্শন সংক্রান্ত ,মহানবী (সা.) এর হাদীসসমূহ আহলে সুন্নাতের প্রাচীন প্রামান্য ও নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থসমূহে এত অধিক পরিমাণে বিদ্যমান যে আহলে সুন্নাতের বড় বড় হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হাফেয ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে মুতাওয়াতির অর্থাৎ অকাট্যসূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত বলে মত প্রকাশ করেছেন।

আল্লামা শাওকানী, হাফেয আবু আবদিল্লাহ গাঞ্জী শাফেয়ী, হাদীসের প্রসিদ্ধ হাফেয ইবনে হাজার আল আসকালানী আশ শাফেয়ী, শেখ মানসূর আলী নাসিফ প্রমূখের মতো বিখ্যাত আলেম ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহে মুতাওয়াতির বলে নিজ নিজ গ্রন্থে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আল্লামা শাওকানী التوضیح فی تواتر ما جاء فی المنتظر অর্থাৎ প্রতীক্ষিত (ইমাম মাহদী) সংক্রান্ত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহ মুতাওয়াতির হওয়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। উক্ত গ্রন্থে তিনি বলেছেন : “ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত যে সব হাদীস ও রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছি সেগুলোর সবই ‘তাওয়াতুর’ অর্থাৎ বহুল ও অকাট্যসূত্রে বর্ণিত হওয়ার পর্যায়ে উত্তীর্ণ । আর এ বিষয়টি হাদীসশাস্ত্র সংক্রান্ত যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তাদের কাছে গোপন নয়। সুতরাং আমি যেসব হাদীস উদ্ধৃত করেছি সেগুলোর ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির…যা কিছু এখানে আলোচনা করা হল তা ঐ সব ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট যাদের অন্তরে সামান্যতম ঈমান ও ইনসাফ বিদ্যমান।”

তাই ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবে বিশ্বাসী নন বা ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয় অথবা শাব্দিকভাবে ‘হেদায়েতপ্রাপ্ত’ অর্থে ‘মাহদী’ শব্দের ব্যাখ্যা করে অথবা বলতে চায় যে, শেষ যামানায় ‘মাহদী’ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি হবেন না; বরং প্রতি যুগের মুজাদ্দিদ বা ধর্ম সংস্কারক আলেমই হবেন মাহদী, এমনকি তিনি নিজেও হয়ত তা বুঝতে পারবেন না; তার মৃত্যুর পর জনগণ তার কর্মকাণ্ড, অবাদন ও কর্মবহুল জীবন অধ্যয়ন করে বুঝতে পারবে যে, তিনি মাহদী ছিলেন-তাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলাই যথেষ্ট যে, তারা ঈমান, ইসলাম এবং আপামর মুসলিম উম্মাহর অন্যতম মৌলিক অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করেছে যা মুতাওয়াতির হাদীস ও রেওয়ায়েতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। আর ধর্মের অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা ঈমান ও ইনসাফের পরিপন্থী। অতএব, ইমাম মাহদী সম্পর্কে গুটিকতক লোকের এ জাতীয় বিরল অভিমতের কোন তাত্বিক মূল্য নেই।

ইমাম মাহদী (আ.) আগমন এবং তিনি যে সকল অত্যাচারী কাফির- মুশরিক ও বিকৃত ধর্মের অনুসারীকে পরাস্ত করে বিশ্বব্যাপী ইসলামের সৌন্দর্যময় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামকে সকল ধর্ম ও মতবাদের ওপর বিজয়ী করবেন-এতদসংক্রান্ত বিশ্বাস মুসলিম উম্মাহ তথা সকল নিপীড়িত জনগোষ্ঠী ও জাতিকে অত্যাচারী শাসকচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবার সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগায়। ইরানের সফল ইসলামী বিপ্লব এবং লেবাননে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর সফল প্রতিরোধ সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় আসলে ইমাম মাহদী (আ.) এর প্রতি বিশ্বাস থেকেই উৎসারিত। কারণ, সবার জানা আছে যে, ইরান ও লেবাননের আপামর জনগণ বারো ইমামী শিয়া যারা ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কেবল বারো ইমামী শিয়া মুসলমানরাই নয়; বরং সকল সুন্নী মুসলমানও শ্বাসরুদ্ধকর চলমান বিশ্বপরিস্থিতিতে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ওপর পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও নাস্তিক্য পরাশক্তিসমূহের উপর্যুপরি চাপ, যুদ্ধ ও আগ্রাসনের কারণে উদ্ধারকর্তা ইমাম মাহদীর দ্রুত আগমন ও আবির্ভাবের প্রত্যাশী। এ বিশ্বাস সকল মাজহাব নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির মূর্ত প্রতীক।

শুধু মুসলমানরাই নয়, বিশ্বের সকল নিপীড়িত ও অধিকারহত জাতি অত্যাচারী শাসকবর্গের অন্যায়-অবিচারে অতীষ্ট হয়ে মহান মুক্তিদাতার আগমনের অপেক্ষা করছে যিনি তাদেরকে অন্যায়-অবিচারের তিমিরাধার থেকে মহামুক্তির আলোর পানে পথ দেখাবেন। তাই শেষ যামানার ইমাম মাহদী (আ.) তথা প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তার আগমনে বিশ্বাস ও মহামুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিঃসন্দেহে গোটা মানব জাতিকে এক মহান আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐক্যবব্ধ করবে।

দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আজ আবার নতুন করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুক্তিকামী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে এবং একের পর এক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসমূহে জনসমর্থন নিয়ে তারাই বিজয়ী হচ্ছে। ভেনেজুয়েলা, পেরু নিকারাগুয়া,ইকুয়েডর হচ্ছে এর জাজ্জ্বল্য উদাহরণ। অন্যদিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আহমাদিনেযাদ ভেনেজুয়েলার কট্রর মার্কিনবিরোধী প্রেসিডেন্ট হুগো স্যাভেজকে ‘বিপ্লবী ভাই ও সঙ্গী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই অন্যায়, শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম মজলুম মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশ্বের আপামর মজলুম জাতির বৃহত্তর পরিসরে ঐক্য ও সংহতি যে গড়ে উঠবে তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। আর এ সার্বিক ঐক্য ও সংহতি নিঃসন্দেহে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের যুগে চূড়ান্ত বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করবে যা তার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ঐশী বিপ্লব এবং সত্য ও ন্যায়ের সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .